শিশু জিনিয়াকে অপহরণকারী কে এই লুপা তালুকদার

নিউজটি শেয়ার লাইক দিন

পিরোজপুর সংবাদদাতা:: গেল এক সপ্তাহ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে অপহরণ হয় শিশু জিনিয়া। অপহরণের সাথে জড়িত নূর নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদারের নামটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কে এই লুপা তালুকদার?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পেশাজীবি লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রী,সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছাত্রলীগ গলাচিপা উপজেলা। মাদকাসেবী বেপরোয়া এই লুপা এ পর্যন্ত চারটি বিয়ে করেছেন। তিনি নিজেকে কখনো দলীয় নেত্রী কখনও মানবাধিকারকর্মী, কখনও সাংবাদিক, কখনও আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। এ রকম নানা পরিচয়ের আড়ালে প্রতারণাই ছিল তার মূল পেশা। তিনি চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। হত্যা মামলার আসামি লুপা নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সদস্য দাবি করলেও তার বাবা একজন চিহ্নিত রাজাকার। লুপার বাবা হাবিবুর রহমান ওরফে নান্না তালুকদারসহ পরিবারের দুই সদস্য ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলো। এক বছর আগে হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন লুপা। গত বছর ওই বাসা থেকে এক ছেলের লাশ উদ্ধা করে পুলিশ। সে সময়ে হত্যাটি আত্মহত্যা বলে জাহির করেন এ বহুরুপী নারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে পথশিশু জিনিয়া অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর লুপা তালুকদারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে আসতে থাকে বিস্তর অভিযোগ। ২০০৩ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানায় লুপা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। ২০১৩ সালে ওই মামলার অভিযোগপত্র থেকে লুপা রাজনৈতিক বিবেচনায় রেহাই পান।

সিনিয়র সাংবাদিক পরিচয়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে পুরো পরিবারই হয়ে গেছে ‘ আওয়ামী লীগ পরিবার’। যে কারণে গৃহকর্মী ধর্ষণ ও শিশু সন্তানসহ হত্যার মামলায় তদন্তে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ার পরও মামলাটি ‘রাজনৈতিক বিবেচনার’ প্রত্যাহার করতে সক্ষম হন লুপা। পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে এমনটা দাবি করা হয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে লুপার পরিচিতি অনেক বড় মাপের সাংবাদিক হিসেবে। তাদের ধারণা, গ্রামের স্কুলের এসএসসি পাস এই নারীর ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা। ক্ষমতাধর অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে তার। চাকরি, বদলি বা ঠিকাদারি কাজ- সবই তদবিরে পাইয়ে দিতেন লুপা। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন টাকা।

জানা গেছে, মাত্র তিনদিনের মধ্যে চাকরি দেওয়ার কথা বলে পটুয়াখালীর মিজানের কাছ থেকে ২০১৮ সালে দুই কিস্তিতে লুপা হাতিয়ে নেন ১৩ লাখ টাকা। দিন, মাস বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি আর হয় না। পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টো মেলে হুমকি। চাকরি দেওয়ার নামে এভাবেই অনেকের কাছ থেকে লুপা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায় তিনি অগ্নি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কাজ করেছেন বেশকটি গণমাধ্যমে। নিজেকে দাবি করেন আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলে। বাগিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। এছাড়াও সিনিয়র রিপোর্টার নবচেতনা, সিনিয়র রিপোর্টার ও সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার মোহনা টিভি, ডিরেক্টর শীর্ষ টিভি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচার এবং বাংলাদেশ কবি পরিষদের সদস্য হিসেবে ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘লুপা তালুকদারের অতীতে তার বিরূদ্ধে একটা হত্যা মামলা ছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *