বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকা এয়ারপোর্টের অদূরে দক্ষিনখান এলাকায় পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ ৩ হাজার ডোজ করোনাভাইরাসের মডার্নার টিকা জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রহণ করে তা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
টিকা দেয়ার সময় প্রতি জনের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয় পল্লী এ চিকিৎসক।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ক্লিনিক থেকে জব্দ করা মডার্নার ২০টি বক্স এবং দুটি আলাদা ভায়াল থেকেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে মে,পল্লী চিকিৎসক এর মালিক ও ডাক্তার বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার কালকিনি কমপক্ষে ৩ হাজার ডোজ মডার্নার টাকা প্রদান করেছেন এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করেছে। এই হিসাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন এই টিকা প্রদান করে।কারণ প্রতিটি ভায়াল থেকে ১৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া তাঁর সুসংগঠিত একটি চক্র দেশের বিভিন্ন জেলায় এটিকে জালিয়াতি সাথে জড়িত। সেই বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে তদন্ত সাপেক্ষ তত্ত্ব বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
আরো পড়ুন# যশোর আদ-দ্বীন চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানে নানা অনিয়ম
তদন্ত কর্মকর্তারা ক্লিনিক মালিক পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারের বরাত দিয়ে আরো জানিয়েছে, ভয়ংকর এই অপরাধের সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত। এরা শুধু দক্ষিণখান নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিকা জালিয়াতি করেছে বলে ধারণা তাদের। ১৮ আগস্ট রাতে দক্ষিণখানে একটি ফার্মেসি থেকে বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার নামে ওই প্যারামেডিককে মডার্নার টিকার দুটি ভায়ালসহ গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে মডার্নার টিকার দুটি খালি বাক্সও উদ্ধার করা হয়। বিজয়কে দুদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার আদালতে নেওয়া হলে মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কভিড-১৯ টিকা দেশে সরকারিভাবে এনে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারিভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এখন পর্যন্ত অনেক বিষয় তদন্তে ওঠে এসেছে। এর মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ এই টিকা বিক্রি করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি তার নিজস্ব ফার্মেসিতে টিকা এনে রেখেছেন। যেখানে কোনো ফ্রিজ নেই। কারণ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় করোনা টিকা রাখার নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেননি।
আবার এই টিকা ফ্রিজ থেকে বের করার পর যাকে বা যাদের উদ্দেশ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে ওই দিনের মধ্যেই সেই পরিমাণ ডোজ দিয়ে দিতে হবে। তা নাহলে টিকার কার্যকারিতা থাকে না। এ ছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টিকার সব কর্মকান্ড শেষ করতে হবে সততার সঙ্গে। কিন্তু তাও করেননি বিজয়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে বিজয় সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ তাকে প্রতারক যেমন বলেছেন, তেমনি অনেকে ‘ভালো মানুষের’ তকমাও দিয়েছেন। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, বিজয় সরকারের গণটিকা কর্মসূচির কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ওই কর্মসূচির দায়িত্ব পালনের সময় তার ক্লিনিকে আনা হয়েছে টিকাগুলো। এসব টিকা উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার টিকা নিয়ে এ ধরনের প্রতারণার কর্মকান্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই বিজয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’ ক্লিনিকের আশপাশে মানুষের জটলা দেখা যায়। সেখানে এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনছিল একদল পুলিশ। একজন বলছিলেন, ‘টাকা ছাড়াই সরকার আমগো টিকা দিচ্ছে। সেই টিকা হেই ব্যাডা টাকা নিয়ে বিক্রি করছে। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। ’ আরেকজন বলছিলেন, ‘হেয় তো পল্লী চিকিৎসক, বিপদে আমাদের সেবা দিত। ভালো মানুষ বলেই জানতাম তারে। সে আমগো সঙ্গে এত বড় বাটপাড়ি করতে পারল। ’
আরো পড়ুন# ৪শতক জমি থেকে ৮০ বিঘার মালিক,পুঁজি দলিল লেখক
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এটা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। এরা করোনা টিকা নিয়ে আরও অনেক দুর্নীতি করতে পারে। তাদের খুঁজে বের করতে পারলে হয়তো সাপও বের হয়ে আসতে পারে। এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বাইরে বিক্রির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, দক্ষিণখানে আটক হওয়া পল্লী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার একজন প্রতারক। সে লেখাপড়া না করেই ডাক্তার পরিচয় ধারণ করে এলাকা লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সে ওই এলাকায় পল্লী ক্লিনিকও খুলে বসে আছেন। তাছাড়া এই প্রতারক আরো কি পরিমানে করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহ করেছেন এবং তার চক্রদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছেছেন। সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া তার পল্লী ক্লিনিকের কোন বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে তার সাথে আর কে কে জড়িত আছে তা জানা গেলে তার পরেই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।