বরিশাল প্রতিনিধি: ভূমিহীন হাওয়ায় অর্থাৎ নিজস্ব বাসগৃহ না থাকায় বরিশালের হিজলার খুন্না-গোবিন্দপুরের বাসিন্দা মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে আসপিয়া ইসলামের পুলিশ কনস্টেবল চাকরি হচ্ছে না।
গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন আসপিয়া ইসলাম। কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য সাতস্তরে যাচাই-বাছাই, শারীরিক যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং দুই দফা মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বরিশালের হিজলার কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম। কিন্তু শুধু ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশে চাকরির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না তার।
পুলিশের প্রতিবেদনে ভূমিহীন হওয়ায় তার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যোগ্যতা বলে চাকরি পাওয়ার দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামনের কাছে গিয়েছিলেন ওই কলেছাত্রী। উর্দ্ধোতন কর্মকর্তার কাছে গিয়েও এ শিক্ষার্থী কোন সুফল পাননি।
বরিশাল সনাকের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ভূমিহীন হলে একজন নাগরিককে পুলিশের চাকরি দেয়া হবে না এটা অমানবিক। এটা কোন দেশের আইন হতে পারে না। যদি এ ধরনের আইন থেকে থাকে অবশ্যই তা সংশোধন করা দরকার। একজন বাংলাদেশী নাগরিক সবথেকে উত্তীর্ণ হয়ে কেন সে ভূমি ও না হওয়ায় চাকরি পাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে তিনি জানান।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, আসপিয়া ইসলামের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে জমিসহ একটি ঘর দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পেলে আসপিয়া ও আজকের পরিবার আর ভূমিহীন থাকবে না। সে ক্ষেত্রে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে আর কোন বিধি-নিষেধ থাকবে না।
উল্লেখ্য,২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হয়ে ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। পরদিন ২৫ নভেম্বর ভাইভার ফলাফলেও মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়ে উত্তীর্ণ হন।
২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা ভাইভায় উত্তীর্ণদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হয় আসপিয়া।
সবশেষ ২৯ নভেম্বর ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষাতে তিনি উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসপিয়া ও তার পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে গত বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন হিজলা থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া।
গত ৩৫ বছর ধরে হিজলায় বসবাস করছে তার পরিবার। ওই এলাকার ভোটার তার পরিবারের চারজন সদস্য। তার বাবা ২০১৯ সালে মারা যান।
সেও ওই এলাকার ভোটার ছিল। বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে এবং মেজ বোন একটি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির কাজ করেন। আর সেজ আসপিয়া হিজলা ডিগ্রি কলেজে বিএ (পাস) পড়াশোনা করে। ছোট বোন পড়ে প্রাইমারিতে।
চাকরির স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া আসপিয়া ইসলাম বলেন, আমি যোগ্যতাবলে ৭টি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় আছি। এমন সময় হিজলার ওসি তাদের জানিয়েছেন, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। আমরা ভূমিহীন। আমার জন্মের আগে থেকে আমার পরিবার হিজলায় বসবাস করে। পূর্ব পুরুষের বাড়ি ছিল ভোলায়। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে সেখানে তারা কোনো জমি ভোগ দখল করেন না। হিজলায় আমাদের জমি না থাকায় আমার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে স্যারের কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আসলে আমরা আইনের বেড়াজালে আটকা।তারপরও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বারবার আলোচনা চলছে। আসপিয়াকে কোনভাবে পুলিশের চাকরি দেওয়া যায় কিনা?