বাবার কোলে উঠে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল শিশু জুবায়ের

নিউজটি শেয়ার লাইক দিন

রাজশাহী সংবাদদাতা : বয়স ৮ বছর।নাম জুবায়ের মন্ডল। পড়ে স্থানীয় বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র । এ বয়সে সমবয়সীদের নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলা করবে। ব্যাগ ঘাড়ে করে স্কুলে যাবে। এটাই নিয়ম ছিল। সব নিয়ম অনিয়মে পরিণত করে দিয়েছে শ্রম পরিদর্শক। তার নামে শ্রম পরিদর্শক একটি মিথ্যা মামলাযর চার্জশিট দিয়েছে। সেই মামলায় বাবার কোলে উঠে রোববার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম আদালতে এসেছিল হাজিরা দিতে।

জুবায়েরের বাবা জুনাব জানান, রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর বাজারে আমার জে বার্মিজ সুজ নামে একটি জুতার দোকান আছে।শখ করে দোকানের সাইনবোর্ডে নিজের আট বছরের ছেলের ছবি দিয়েছিলাম। ছবির নিচে ছেলের নামও লিখেছিলাম। এটাই বাবার জন্য কাল হয়েছে। ছেলেকে নিয়ে তাঁকে এখন রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম আদালতে হাজিরা দিতে আসতে হচ্ছে।  রোববারও বাবা ও ছেলের হাজিরার দিন ছিল।গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় পবা থানার একজন কনস্টেবল তাঁর হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দেন। তিনি খাম খুলে দেখেন তার মধ্যে রাজশাহীর শ্রম আদালতের দুটি সমন। একটি তাঁর নিজের নামে, অপরটি তাঁর ছেলে জুবাইর আহমেদের নামে। এতে তাঁর ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬–এর ৩০৭ ধারার অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের গত ২৫ মার্চ নিজেদের অথবা উকিলের মাধ্যমে হাজির হতে বলা হয়েছে। আদালত থেকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ জারি করা হয়েছে।আদালতের এই আদেশ পাওয়ার তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। তাঁর কী অপরাধ বা তাঁর শিশু সন্তানেরই–বা কী অপরাধ। প্রথম দিন হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে ছেলেসহ তাঁকে জামিন নিতে হয়। তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যেকোনো এক শুক্রবারে নাকি তাঁর দোকান খোলা ছিল। তাতেই শ্রম আইনে শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এটাই তার বড় অপরাধ ।  সে বলেন তিনি কোনো শুক্রবারেই তাঁর দোকান খোলা রাখেন না। দোকান খোলা অবস্থায় কোনো দিনই তাঁর শ্রম আদালতের কোনো পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা হয়নি।শ্র

শ্রম আদালতের আইনজীবী এস আলম জামান জানিয়েছেন, যে ধারার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র না দেওয়ার ব্যাপারও আছে। তবে যেহেতু তাঁর দোকানে কোনো শ্রমিক নেই এবং তিনি একা দোকান চালান, সেহেতু শুক্রবার বন্ধের দিনে দোকান খোলার রাখার অভিযোগ আসে। তবে তাঁর (জুনাব আলী) ছেলে দোকানের মালিকও নয়, পরিচালকও নয়। সাইনবোর্ডে ছেলের ছবি থাকার কারণে তাকে মামলার আসামি করা যেতে পারে না।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের পরিদর্শক বাবুল আক্তার বাদী হয়ে বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে দুটি মামলা করেছেন। শুক্রবার দোকান খোলা রাখার কারণে ।  এই মর্মে দুজন শ্রমিক তাঁদের কার্যালয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ওই বাজার পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেদিন দোকানিরা একযোগে তাঁকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে পবা থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। এই অবস্থায় তিনি মুঠোফোনে কয়েকটি দোকানের সাইনবোর্ডের ছবি তুলেছিলেন। ছবিতে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের জবাব দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। যারা জবাব দেয়নি, তাদের নামে তিনি শ্রম আদালতে মামলা করেছেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন,  শিশুকে মামলার আসামি করার ব্যাপারে বলেন, তাঁদের লোকবল নেই। নিরাপত্তার অভাবে তিনি ওই এলাকায় যেতে পারেননি। এ জন্য যাচাই করতে পারেননি যে, কে শিশু আর কে বড়। সাইনবোর্ডে যার নাম পেয়েছেন, তার নামেই মামলা দেয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *