তারিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর প্রতিবেদক: পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর বাজারের লাগাম যেন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।
দেশে আলু আমদানী নির্ভর না হলেও পেঁয়াজ ও রসুন কিছুটা হলেও এখন আমদানী নির্ভর হয়ে পড়েছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য দু’টি দেশে সংকট দেখা দেওয়ায় ভারত থেকে আমদানী করা হচ্ছে। তবে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী হলেও বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছে না।
যশোর খুচরা পর্যায়ের বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়তদারদের দাবি আমদানিকারক ও সংরক্ষণকারীরা সিন্ডিকেট করেই অতি মুনাফার লোভের আশায় এ সংকট তৈরি করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে পণ্যটির দাম কমানো সম্ভব।
যশোর বড় বাজারের আড়তদার বাদশা মিয়া বলেন, মঙ্গলবার সকালে তারা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারিতে পিঁয়াজ বিক্রি করেছে। এরমধ্যে ইন্ডিয়ান পিঁয়াজ ৬০ টাকা ও দেশী পিঁয়াজ বিক্রি করেছে ৭০ টাকা। তার দাবি আমদানিকাররা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে রেখেছে। সরকার যদি দাম বাড়ার গোড়া খুঁজে অভিযানে নামে তাহলে নিশ্চয়ই পেঁয়াজের দাম কমানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র থেকে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে চলতি মাসেই ভারত থেকে ২৭৮ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানী করা হয়েছে। এসব পিয়াজ আমদানীকারকদের মধ্যে রয়েছে খুলনার এস এম কর্পোরেশন, রাজ ট্রেডিং, উষা ট্রেডিং। এর মধ্যে এস এম কর্পোরেশন চলতি মাসেই দুই কনসার্টমেন্ট, রাজ ট্রেডিং এক কনসারমেন্ট ও উষা ট্রেডিং ১ কনসারমেন্ট পেঁয়াজ আমদানী করেছে। এসব মালামালের ইনভয়েস ভ্যালু দেখানো হয়েছে ১৪০ থেকে ২২০ ইউএস ডলার। সেই অনুযায়ী ভারত থেকে এ সব পেঁয়াজ ক্রয় করা ১৪ টাকা ২৯ পয়সা থেকে ২৪ টাকা করে। সব মিলিয়ে কাস্টমসের অ্যাসেসমেন্ট ধরা হয়েছে ৩৩০ ডলার। কাস্টমসের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুসহ আমদানিকৃত এসব পিঁয়াজের দাম দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২৪ টাকায়। এসব মালের অধিকাংশই ক্লিয়ারেন্স করেছে বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট শোভা এন্টারপ্রাইজ, রয়েল এন্টারপ্রাইজ, উৎস এন্টারপ্রাইজ ও বাংলাদেশ লজিস্টিক নামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে গতকাল ঢাকার পিএইচপি বিল্ডার্স নামে এক আমদানীকারক ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানী করেছে। যার ইনভয়েস মূল্য দেখানো হয়েছে ১৪০ ইউ এস ডলার। সে হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয় মূল্য পড়ে ১৪.২৯ টাকা।
বেনাপোলের সিএন্ডএফ এজেন্ট শোভা এন্টারপ্রাইজের মালিক নাবিল হোসাইন বলেন, আমদানীকৃত পেঁয়াজের ইনভয়েস মূল্য মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো কাস্টমসের এসেসমেন্ট মূল্য ও ইন্ডিয়ান কাস্টমসের ইনভয়েস মূল্যের উপর রপ্তানী শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া। দু’দেশের সরকারী পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করে ভারতে রপ্তানী শুল্ক উঠিয়ে নিলে পেঁয়াজের দাম অনেক অংশ কমে যাবে।
বেনাপোল এক নম্বর শুলকায়ন গ্রুপের রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বেনাপোল দিয়ে সব সময়েই কাঁচামাল আমদানী কম হয়ে থাকে। ভোমরা ও হিলি বন্দর দিয়ে বেশি কাঁচামাল আমদানী হয়। তবে দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার পর পরেই প্রতিদিনই প্রায় ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ আসছে। এসব পেঁয়াজের ক্রয় মূল্য ১৪ টাকা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত। দেশের বাজারে পেঁয়াজের উদ্ধ গতিতে তিনি ওবিস্মিত বলে জানান ।