১৭ চাকুরী প্রত্যাশীকে আটকে নির্যাতন, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিউজটি শেয়ার লাইক দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে ১৭ চাকরী প্রত্যাশীকে অপহরণ করে তাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি।

আসামিরা হলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের বেলাল হোসেন(২৪), একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি হাসান (২৪), গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রেদওয়ান হাসান রাফি (২০) পদার্থ বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাহান রাব্বি (২৫), সিএসই  বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব (২৪) ও পি এস এস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহিনুর রহমান (২০) সহ অজ্ঞাত নামে আরও পাঁচ থেকে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে ভুক্তভোগীরা।

মামলাটি দায়ের করেন যশোর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের আরাফাত হোসেন ইমন নামে এক যুবক ।

 

মামলায় উল্লেখ করা হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে আসার সময় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে নিয়ে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে ছয় ঘণ্টা ধরে তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে পরীক্ষা শেষে হলে আটকে রাখা কক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেয়ে ভুক্তভোগী প্রার্থীদের ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স সংগ্রহ করতে গেলে সেটিও ছিনিয়ে নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

যবিপ্রবি প্রশাসন ও ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদের চাকরি পরীক্ষা হয়েছে। ১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লিফট অপারেটর পদে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। ফলে তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যাতে পরীক্ষা দিতে না পারে; সেই জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রার্থী ছাড়া অন্যকোন প্রার্থী আসলেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসীয়ূর রহমান ছাত্রবাসের ৩০৪ ও ৩০৯ নাম্বার কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে পরীক্ষা শেষে ৬ ঘণ্টা পর ভুক্তভোগী প্রার্থীদের নিয়ে যেয়ে বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রার্থী ছাড়া কাউকে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

মামলার বাদী আরাফাত হোসেন ইমন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সাথে সাথে কয়েকজন আমাকে ডাকে। ডেকে নিয়ে বলে কি পরীক্ষা দিতে এসেছেন ? এর পর আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নাম্বার রুমে নিয়ে গিয়ে বলে, তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, এডমিট কার্ড কোথায় থেকে পাইলি ? ওই কক্ষে আমিসহ ৬ জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এছাড়াও হলের ৩০৪ নাম্বার কক্ষ ও পাঁচ তলার একাধিক রুমে ১৭ জনের মতো আটকে রাখা হয়। ৩০৯ নাম্বার রুমে জোরে চিল্লাচিল্লি করলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি করে। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করে। তারপর সাড়ে তিনটার দিকে তারাই শহরের পালবাড়ি নিয়ে ছেড়ে দেয়।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা হামজা রহমান বলেন, ‘সাড়ে ৯টার দিকে একটি ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসি। নামার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমাকে ডাকলো। এর পর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার লিফট চালানার অভিজ্ঞা রয়েছে ? তার পর ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর কক্ষে ঢুকিয়ে আমাকে আটকে রাখা হয়। ফোন কাগজপত্র সব ছিনিয়ে নেয়। তিনি বলেন, ‘চাকরি পরীক্ষা দেওয়ার অনুরোধ আকুতি জানালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একজন আমাকে বলে, ‘তোর চাকরি বড় নাকি জীবন বড়! ভুক্তভোগী এক প্রার্থীর অভিভাবক বলেন, সকালে আমার জামাই আরিফুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে আমার জামাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পায়। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানায়। পরবর্তীতে আমি উপাচার্য স্যারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

 

এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সাথে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সাথে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয় তবে আমরা ভিসি স্যারকে জানায়। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেয়া হয় প্রশাসনিকভাবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সব মিথ্যা ভিত্তিহীন।

 

জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, চাকুরী প্রত্যাশীদের আটকে রেখে নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি টিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় জরুরিভাবে মিটিং ডাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভক্ত ভোগের পরিবার আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। শনিবার রিজেন্ট বোর্ডের সভায় মিটিং এর পরে অপহরণেরও সিসিটিভি ছিনতাই দুটি মামলা দায়ের করা হবে।

 

বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম হোসেনের মুঠোফোনে সংযোগ দিয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কিছু জানা যাবে না বলে ফোনে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *