নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বেনাপোল রেল স্টেশনের ইমিগ্রেশন কাস্টমস মাদক সেবি বাবু নামে একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভারত থেকে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিতে আসা সাধারণ পাসপোর্ট-যাত্রীদের এ মাদক সেবী সিন্ডিকেটের সদস্যরা কিছু কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় পাসপোর্ট যাত্রীদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। বাবু ভবারবেড় গ্রামের জানু পাগলার ছেলে।
অথচ প্রকৃত চোরাচালানি লাগেজ ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে ভারত থেকে নির্বিঘ্নে স্টেশন কাস্টমস ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে পাচার করছে ওষুধ, দামি কাপড়, কসমেটিক সামগ্রী, সোনারবার ও নেশার জাতীয় মাদকদ্রব্য।
আরো পড়ুন>>যবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূয়া সনদে চাকরি করে যেভাবে ধরা খেলেন ৯ শিক্ষক-কর্মচারী
রোববার (১৩ই নভেম্বর ২০২২) সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ভারতের কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি বেনাপোল রেল স্টেশনে পৌঁছনের সাথে সাথে কাস্টমসের ও বেনাপোলে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যরা ট্রেন থেকে সব যাত্রীদেরকে নামিয়ে বেনাপোল রেলস্টেশন আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন কাস্টমসের ভিতর প্রবেশের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এরপর কাস্টমসের ভিতরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের রাখা একটি মাদক সেবী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ পাসপোর্ট যাত্রীদেরকে আটকে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃত লাগেজ ব্যবসায়ীও চোরাচালানিরা সিন্ডিকেটের সাথে আঁতাত করে নির্বিঘ্নে লাখ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে ইমিগ্রেশন কাস্টমস অতিক্রম করছে।
আরো পড়ুন>> সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বাইক ফেলে পালালো হাইওয়ে পুলিশ
বন্ধন ট্রেনটির পাসপোর্ট যাত্রী রহিমা বেগম, নজরুল ইসলাম, তারিক হাসান, মেহেরুন আক্তার সহ একাধিক পাসপোর্ট যাত্রী সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি এখন চোরাচালানিদের লাগেজ ব্যবসার নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। ট্রেনটিতে এখন কোন ভদ্র মানুষ যাতায়াত করতে চায় না। চোরাচালানিরা ট্রেনটিতে ঠেলাঠেলি করে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে ওঠে। অথচ সাধারণ পাসপোর্ট-যাত্রীরা যারা ভারতে ভ্রমণে ও চিকিৎসার জন্য যায় তারা এসব চোরাচালানদের দ্বারা নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু লজ্জাও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি বেনাপোল রেলস্টেশনে আসার সাথে সাথে চোরাচালানিরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসব চোরাচালানিরা কাস্টমসের ভিতরে থাকা সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে লাখ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন>>বেনাপোল রেলস্টেশনে চোরাচালানিদের কাছে জিম্মি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
অথচ কাস্টমসের স্ক্যানার মেশিন বন্ধ রেখে আমাদের ব্যাগ তল্লাশির নামে নানা ভাবে হয়রানি করছে। চাওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলেই, বেড়াতে গিয়ে সামান্য কেনাকাটা করলে সেটাও এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ও কাস্টমসের সিপাহী সোহেল ও আব্দুর রহিম জোর জবরদস্তি করে এসব মালামাল রেখে দিচ্ছে। অথচ একজন চোরাচালানি চার থেকে পাঁচটা বড় বড় লাগেজ ব্যাগে মালামাল নিয়ে নির্বিঘ্নে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাদেরকে কোনরকম দাঁড় করানোতো দূরের কথা তাদের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে দেখা হচ্ছে না। এটা খুব অমানবিক বলেও তারা জানান। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন বর্তমানে ট্রেনটিতে ভারত থেকে কলকাতায় যাতায়াতের জন্য নয়টি বগিতে ৯ শতাধিকের সিট থাকলেও অব্যবস্থাপনা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ট্রেনটিতে সাধারণ যাত্রী দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধানে সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এসব যাত্রীরা।
আরো পড়ুন>>১০ কোটি টাকার সরকারি সম্পদ ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে শিল্পপতির নামে লিখে দিলো সাব রেজিস্টার
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন ইমিগ্রেশন কাস্টমসে সুপার আব্দুল আলিমের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়া কিছুই বলতে পারবো না। আপনি বেনাপোল কাস্টম হাউসে আসেন। এরপরে আপনাকে জানানো হবে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার আব্দুল হাকিমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি আপনার কোন কিছু জানতে হয়, তাহলে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আব্দুল আল কাইয়ুমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
আরো পড়ুন>>বন্দরে ট্রাকে চোরাচালানীরা বেপরোয়া,পাচার হচ্ছে সোনা,মাদক ও মূল্যবান পণ্য
এরপর বিষয়টি জানার জন্য আবার বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আব্দুল আল কাইয়ুমের অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন বিষয় জানতে হলে আপনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। এর পরেই আপনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।